শিরিনা ও সার্ক শীর্ষ মালে


শিরিনা ও সার্ক শীর্ষ মালে
মাহমুদ হাফিজ


সেপ্টেম্বর,১৯৯৭।
সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে মালদ্বীপে যাচ্ছি। রাতের ফ্লাইট। আকাশের অবস্থা ভালো নয়। আকাশে ঘনমেঘ,হালকা বাতাস, গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি।  আঁধার ভেদ করে মাঝে মাঝে ভয়াল গর্জনে বিদ্যুত চমকাচ্ছে । ঘনমেঘ পাস কাটাতে থেকে থেকে সুপরিসর এয়ারবাস উথাল-পাথাল করছে স্কাইলাইনে। একবার বহুদূর নেমে আসছে,আবার দ্রুতই উপরে উঠে যাচ্ছে।  অন্যযাত্রীদের মতো আমারও  শুরু হয়েছে বুক ধড়পড়ানি ।
ঘন্টাকাল চলার পর এক সময় ল্যান্ডিংয়ের ঘোষণা এলে ধড়পড়ানি কমলো।  মূহুর্তেই হৃদয় হিম হয়ে এলো নীচে তাকিয়ে।  দেখি, পাইলট আকাশে একবার চক্কর দিয়ে সমুদ্রের মধ্যেই বিমান নামিয়ে দিচ্ছে । সমুদ্রের নীল পানি রাতের আঁধারে নিকষ কালো । বুঝতে পারছি  নির্ঘাত মৃত্যু ছাড়া কপালে কিছু নেই বুঝি আজ। সিটবেল্ট টাইট করে সামনে আসন চেপে মাথা নীচু করে দোয়া দরুদ পড়ছি। কিছুক্ষণের মধ্যে বড় ঝাকুনি খেয়ে বিমানের গতি কমতে শুরু করেছে। যাত্রীরা চুপচাপ,ভয়ার্ত।  চোখ খুলে জানালা গলিয়ে তাকিয়েই মালদ্বীপে নতুন আগন্তুকদের মতো ভুল বুঝতে পারলাম। মালে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বলতে সাগরের মধ্যে ছোট্ট একটি দ্বীপের একচিলতে রানওয়ে।  বিমান টেকঅফ ল্যান্ডিংয়ের সময় ওপর থেকে আকস্মিকই যাত্রীরা ভুল বুঝে ভয়ে কেঁপে ওঠে-বিমান বুঝি সমুদ্রযাত্রা করলো!বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ইঞ্জিন বোট ধ্বনিতে চেপে পনেরো মিনিটের মধ্যে নিরাপদে পৌঁছালাম মালের হোটেলে। 
পেশাগত প্রয়োজনে সার্ক সম্মেলন কভার করতে এসেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসেছেন বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে। সরকারি প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসাবে মালদ্বীপে পাওয়া গেল বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বাসস এর সিনিয়র সাংবাদিক শফিকুল করিম সাবুকে। প্রযুক্তিক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকার কারণে এ সম্মেলন কভার করতে আমার আর সাবু ভাইর কি রকম গলদঘর্ম হতে হয়েছে সে কাহিনী বলার মতো
আমি প্রযুক্তিবান্ধব নই এখনও। সার্কের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনের একাধিক রিপোর্ট কভার করতে কাগজ কলম ফ্যাক্সই ভরসাসম্মেলনের কোন কর্মসূচী শেষে মিডিয়া সেন্টারে এসে সাদা কাগজে লিখতে থাকি দীর্ঘক্ষণ ধরে। বিদেশ থেকে রিপোর্ট পাঠাতে এখন পর্যন্ত ফাক্স মেশিনই ডোমিনেটিং  টুল। তবে প্রযুক্তি অভিযাত্রায় পথিকৃৎ অনেক দেশের সাংবাদিক আধুনিক ল্যাপটপ থেকে ই মেইল ব্যবস্থায় ইতোমধ্যেই অভ্যস্থ বাংলাদেশের সাংবাদিক হিসাবে আমরা কতোটা পিছিয়ে তা ভেবে অবাক হতে হয়। ঢাকায় সংবাদ পাঠাতে হাতে লেখা কাগজের রিপোর্টে আমার ভরসা যখন ফ্যাক্স,প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসাবে সরকারি বার্তা সংস্থা বাসস প্রতিনিধি রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করতে এলেও তার সম্বলও ভারি টাইপরাইটার এবং ফ্যাক্স।
ভারি টাইপ রাইটার নিয়ে বেড়ানো সম্ভব নয় বলে রিপোর্ট পাঠাতে সাবু ভাই আরও গলদঘর্মসার্ক নেতারা ছিলেন মালে থেকে দূরদ্বীপ কুরুম্বা ভিলেজ রিসোর্টে। সাবুভাই সহ অন্য সফরসঙ্গীরা উঠেছেন মালে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের মূল কেন্দ্র দারুবারু গেথেকে আধঘন্টার হাঁটা দূরত্বে,সাগরপাড়ের হোটেল ভিলিঙ্গিলি ভিউয়েমালদ্বীপ দ্বীপপুঞ্জের রাষ্ট্র আর রাজধানী মালে ছোট্ট শহর বলে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট নেই। সাবুই ভাইকে দেড়কিলোমিটারের মতো পথ হেঁটে হোটেলে পৌঁছে টাইপরাইটারে লিখতে বসতে হয়তারপর টাইপ করা রিপোর্ট ফ্যাক্স করতে এক কিলোমিটার দূরে মিডিয়া সেন্টারে দৌড়। আমি ছুটেছি সরাসরি সাগরপারের তারকা হোটেলে বসানো মিডিয়া সেন্টারে। সাবু ভাইকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট করতে হয়েছে সম্মেলন কভার করে ফিরে আসার দিন। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হলে সবসময় তাড়াহুড়ো করে তাঁর আগেই নির্ধারিত যানবাহন বা বিমানে আসন নিতে হয়। মালদ্বীপের রাজধানী মালে এক দ্বীপে আর বিমান বন্দর আরেক দ্বীপে। বিশেষ লঞ্চে চেপে বিমানবন্দরমুখো যাত্রা করতে হয় প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের। হোটেল থেকে নিজের ল্যাগেজপত্রের সঙ্গে ভারি টাইপরাইটার বহন ছিল তাঁর জন্য বাড়তি বোঝা। প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানাদি কভার করার কারণে কষ্টটি তাঁর নিত্যসঙ্গী। একে প্রযুক্তির বিড়ম্বনা বলে অভিহিত করতে পারি। তথ্যপ্রযুক্তির দ্রুত বিকাশ ঘটতে শুরু করলেও আমরা নিতান্তই পিছিয়ে। ফলে ভিনদেশি সাংবাদিকরা এ ধরনের সম্মেলনের খবর ল্যাপটপে টাইপ করে ই মেইল ব্যবস্থায় মূহুর্তে খবর পাঠাচ্ছে, আমাদের সরকারি সংস্থা বাসসের মতো এ্যাডভান্সড প্রতিষ্ঠানের মর্যাদাবান সিনিয়র সাংবাদিককেও টানতে হয়েছে টাইপরাইটার।
মালে সার্ক শীর্ষ সম্মেলেন কভার করতে এসে অভিজ্ঞতা অন্তহীন। সার্ক এর নানা সংবাদ কভার করি,আর ফুরসত পেলেই এক চক্কর হেঁটে আসি পুরো মালে শহর। শহরটি এতো ছোট্ট একটি দ্বীপে যে ঘন্টাকাল হেঁটেই এর চারদিক  চক্কর দেয়া যায়। ছোট্ট দ্বীপটির মধ্যে এইখানে রাষ্ট্রপতি মামুন আবদুল গাইয়ুমের সচিবালয়,তো কয়েকশ গজ দূরে পার্লামেন্ট। এই জাতীয় স্টেডিয়াম তো ওই রাষ্ট্রপতির বাসভবন। আমার হোটেল বুরুনি গে রাষ্ট্রপতি বাসভবন ও সচিবালয়ের কাছেই। যাওয়া আসার পথে একদিন রাষ্ট্রপতির সাক্ষাতকার নেয়ার পরিকল্পনা করে তাঁর একতলার বাসভবনে গিয়ে হাজির হলাম। পরিচয় পেয়ে ভবনের নিরাপত্তা ও সাধারণ বিভাগের কর্মকর্তারা যত্নআত্তি করে বসালেন। আতিথেয়তা সেরে পরে রাষ্ট্রপতি সচিবালয়ে যোগাযোগের পরামর্শ দিলেন। সামান্য দূরত্বে অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করলাম। তখন সার্ক সম্মেলন চলছে। প্রেসিডেন্ট মামুন আবদুল গাইয়ুম সচিবালয়ে ছিলেন না। কর্মকর্তারা আমার হোটেলের ঠিকানা রেখে তাঁরাই যোগাযোগ করবেন বলে জানালেন। হাঁটতে হাঁটতে হোটেলে এলাম। রিসিপশনে ঢোকামাত্র রাষ্ট্রপতি সচিবালয়ের সীলমোহরকৃত পত্র ধরিয়ে দিলেন ফ্রন্টডেস্ক কর্মীআমি চমকিত। রুমে গিয়ে পত্র খুলে দেখি রাষ্ট্রপতির অফিস থেকে খুব বিনয়ের সঙ্গে বলা হয়েছে সার্ক এর চেয়ারম্যান হিসাবে সম্মেলন চলাকালে রাষ্ট্রপতি মহোদয় খুব ব্যস্ত। সম্মেলন শেষ হওয়ার দুচারদিন পর তিনি সময় দিতে পারেন। তবে তিনি সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের চেয়ারম্যান হিসাবে সম্মেলনের শেষদিন মালে ঘোষণার জন্য সাংবাদিক সম্মেলনে অংশ নেবেন। মালদ্বীপ প্রেসিডেন্টের কাছে আমার প্রশ্নগুলো যাতে ওই সময় করি এ অনুরোধ করা হয়েছে পত্রটিতে। যোগাযোগের ঘন্টাকাল না পেরোতেই প্রেসিডেন্ট সচিবালয় থেকে এ ধরনের ত্বরিত যোগাযোগে মুগ্ধ না হয়ে পারলাম না। মনে মনে বললাম-মামুন আবদুল গাইয়ুম,যুগ যুগ জিও।
সার্ক এর নয়া চেয়ারম্যান হলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী আই কে গুজরাল। ফ্রেঞ্চকাট শ্রুশ্মমন্ডিত চেহারায় শিক্ষিত মার্জিতরুচির ভদ্রলোক। রাজধানী শহর থেকে দশ নটিক্যাল মাইল দূরে কুরুম্ভা ভিলেজ রিসোর্টে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকেছেন তিনি । মালে থেকে সাংবাদিকদের নিয়ে যাওয়া হলো বিশেষ ইঞ্জিন বোটে। নারী পাচার প্রতিরোধে সার্ক দেশগুলো একযোগে কাজ করে যাবে এমন অঙ্গীকার এবারের সার্কের অন্যতম প্রতিপাদ্য। প্রশ্নোত্তর পর্বে ভারতপ্রধানমন্ত্রী আই কে গুজরাল মহোদয়কে প্রথম প্রশ্নটি আমার মুখ থেকেই বেরুলো। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের কারাগার ও শেল্টারহোমে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অগুণতি নারী-শিশু পচছে। সার্কের প্রভাবশালী সদস্য দেশ হিসাবে আপনার সরকার কি ভূমিকা নেবে-এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে ভারত প্রধানমন্ত্রীকে বেশ খানিকটা সময় নিতে হলো।
শুরু হওয়ার বেশ কয়েকদিন আগেই পৌঁছেছি,সম্মেলন শেষ হওয়ার পরও রয়ে গেছি নানা টানে। এই টান লোভনীয় বন্ধুত্বের,নিশ্চিন্তে কমদামে সাগরদুহিতা মালদ্বীপে থাকার এবং পেশাগত প্রয়োজনের। সম্মেলন উপলক্ষে প্রতিদিনই মিডিয়া সেন্টারে যাওয়ার মধ্যেই অজান্তেই চমৎকার ভাব হয়ে গেল এক তন্বী তরুণী কর্মকর্তার সঙ্গে। নাম তাঁর শিরিনা। শ্যামলা রঙা চিকন  গড়ন, কালো ও গভীর চোখ। চমৎকার বাচনভঙ্গিতথ্য মন্ত্রণালয়ের হয়ে মিডিয়া সেন্টারে বিদেশি সাংবাদিকদের দেখভালের দায়িত্ব যে কজনের ওপর,সে তাদের অন্যতম। মিডিয়া সেন্টারে রেগুলার উপস্থিত একমাত্র বাংলাদেশী হিসাবে আমার ওপর তার যেন উথলে ওঠা দরদ। এ দেশের প্রধানমন্ত্রীতনয় বাঙালিকন্যাকে বিয়ে করেছেন এ প্রসঙ্গ তুলে এই শিরিনার আলাপের অন্ত নেই। আলাপে-সংলাপে বহুদূর। পরের কদিন মালে শহরসহ কয়েকটি দ্বীপ আর নীলসমুদ্র পারে ঘুরে ফিরতে আর অসুবিধা হলো না। ঘন্টাকালের হাঁটাহাঁটিতেই মালে শহর শেষ। শিরিনাকে বহু অনুরোধ করেও দ্বীপ রিসোর্টে বেড়াতে নিয়ে যেতে পারিনি। তাঁর কথা: একহাজার একশটি  ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপ নিয়ে গঠিত মালদ্বীপের শতাধিক দ্বীপের রিসোর্টগুলো শুধু বিদেশিদের জন্য নিবেদিতদেশিদের অবাধ চলাচল সেখানে বিধিনিষেধভূক্ত। সঙ্গে অন্য দ্বীপে নিয়ে যেতে না পারলেও নির্দেশিত ব্যবস্থায় মালদ্বীপের থুলুসদু,কুরুম্ভা ভিলেজ,ফুলমুন বীচ ভ্রমণ করেছি। সামুদ্রিক টোনা মাছসহ অন্যসব খাবার খেয়েছি আত্মা পুরে। 
এই শিরিনার বেশ কদিনের বন্ধুত্ব আমাকে শেখালো মালদ্বীপবাসীকে দিভেহি বলে। তাদের ভাষার নামও দিভেহি। রাজধানীর সড়কের নাম মাগু। দারবারু গে বা সার্কশীর্ষের ভেন্যু রাষ্ট্রীয় দরবার  হলে ঢোকার মুখে  রাস্তাটির নাম জানুয়ারি মাগু। সার্ক শীর্ষে শুরু হওয়ার আগে নতুন সড়কটি তৈরি করে বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমিকরা। এটা জানাতেও ভুল করলো না শিরিনা। দিভেহি ভাষায় এটার দাম কতো বাক্যটি হচ্ছে- আগু কেয়া বাড়ে? একদিন এক দোকানে এক জিনিস দেখে ওই বাক্যটি আওড়াতেই দোকানীরা দিভেহি ভাষা জানি ভেবে মাতৃভাষায় কথা বলতে শুরু করলোআমার মুখ থেকে এক শব্দও বের হলো না আর,পরে ইংরেজী বলে রক্ষা। আরেকদিন মালদ্বীপের রেস্টুরেন্ট খুঁজতে খুঁজতে হয়রান। সার্কশীর্ষকালে বেশিরভাগ নিমন্ত্রণ  ও রুমসার্ভিসের ওপর দিয়ে চালিয়েছি। একদিন দুপুরে খাওয়ার জন্য রেস্টুরেন্ট খুঁজে পাচ্ছি নাদিভেহি ভাষায় রেস্টুরেন্টের সাইনবোর্ডে কি লেখা থাকবে তা বলে দিয়েছে শিরিনা। কিন্তু দিভেহির সে বাক্যটি আর মনে আসলো না। সাগরপাড়ের লম্বা সড়কটির ওপর কয়েকবার ঘুরে বেশ কয়েকটি টি স্টলের সাইনবোর্ড দেখা গেল,রেস্টুরেন্টের আর দেখা নেই। টি স্টলগুলো আবার ভাল রেস্টুরেন্টের মতো কাঁচঘেরা। অগত্যা চা খাওয়ার জন্য এক টি স্টলের ভিতরে ঢুকে দেখি দিব্যি ভাত, রুটি, মাছ,মাংস খাওয়া দাওয়া চলছে। লোকজন বললোঃ ইংরেজীতে টি স্টল লেখা দোকানগুলোই দিভেহিদের খাওয়ার রেস্টুরেন্ট।
সার্ক শীর্ষ সম্মেলন শেষ হওয়ার পর কয়েকদিন থাকার মনস্থির করে কমদামের হোটেলে খোজ করলাম একদিন। মালদ্বীপে যে হোটেলে উঠেছি,সার্ক শীর্ষ কালে সেখানে ঢাকার প্রবর্তনার ফরিদা আখতার,বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির সালমা আলী প্রমুখও ওঠেন। এনজিওর কর্তা হিসাবে তাঁরাও সার্ক শীর্ষের অতিথি। হোটেলে অবস্থানের সময় চলতি পথে তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে সময়টা কাটলো। তারা দেশে ফিরে গেলে খুজে বের করলাম বিশ ডলার ভাড়ার  হোটেল এক্সট্রা হ্যাভেনকাকতালীয়ভাবে এক্সট্রা হ্যাভেনের ম্যানেজার বাংলাদেশী যুবক। আলাপে আলাপে জানা গেল সে ঢাকার কবি আ শ ম বাবর আলীর অনুজ। কবি আ শ ম বাবর আলী আর আমি ঢাকায় একই পাড়ার বাসিন্দা। এসব আলাপ পরিচয়ে এক্সট্রা হ্যাভেনে এক্সট্রা খাতির পেতে অসুবিধা হলো না।
দেখতে দেখতেই মালে ছাড়ার দিন চলে এলো। বিদায়বেলায় বেশ মনোকষ্ট নিয়ে ইঞ্জিনবোটে উঠতে হলো মালে বিমান বন্দরের উদ্দেশে। শিরিনা সাগরপাড়ে হাত নেড়েছে। নীলসমুদ্রের মতোই তাঁর চেহারা বেদনার্ত,ফ্যাকাশে ও নীল। বিমানবন্দর থেকে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের বিমান সমুদ্র স্পর্শ করে টেকঅফ করলে অপূর্ব সৌন্দর্যমন্ডিত মালদ্বীপের দিকে তাকিয়ে ভেবেছি, চোখের পানি মানুষকে আটকে রাখতে পারে না বলে  সমুদ্রের নীল ফেলে মানুষ নীল স্কাইলাইন ছোঁয়ার জন্য ছুটে চলে।


মালদ্বীপ, সেপ্টেম্বর ১৯৯৭

Comments

Popular Posts